দৈতাকৃতি
শিল বার করে মশলা বাটতে বসলাম। কারণ এসব ধ্রুপদী রান্নার জন্য লোকে নাকি ঐ মিক্সী তে
মশলা বাটেনা - মানে সেটা করলে নাকি বিরিয়ানীর মত মহার্ঘ রত্নের সাঙ্ঘাতিক অপমান। যাইহোক
শিলে রাশি রাশি পেঁয়াজ বাটা আমার কাছে একটা যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। একটুও চারিদিকে না
ছড়িয়ে, প্রতিমূহুর্তে ব্যাসার্ধ আর কৌণিক ভরবেগের হিসেব করে, পরিমাণ মতন জল দিয়ে মা-মাসীমা
রা যে কি করে ঘটাঘট একটা পেঁয়াজের লেই বানিয়ে ফেলেন এ আমার কাছে সেই ছোটবেলায় পড়া ‘অন্ধকারের
কন্ধকাটা’র চেয়েও গভীর রহস্য। কিছুক্ষণের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই নাকের জলে চোখের জলে
মাখামাখি অবস্থা। তাও কিন্ত আমি হাল ছাড়িনি। ব্যাক্তিগত ক্ষুদ্র অসুবিধার কথা অস্বীকার
করে আমি মশলা বেটেই যাচ্ছি বেটেই যাচ্ছি। একমাত্র অমরেশ এসে যখন বললো “যথেষ্ট হয়েছে,
এবার ছাড়” তখনই কিন্তু ছেড়েছি। মানে আমি কিন্তু
মোটেই ফাঁকিবাজ নই। মানে এরকম কিন্তু কেউ যেন না ভাবে।
এরপর
সেই এক গামলা মাংস কে আচ্ছাসে ঐ পেঁয়াজ-আদা-রসুনের লেই আর আরো কিসব গোলমরিচ-হলুদ-নুন
আরো রাম গঙ্গা কিসব দিয়ে মাখা হল। বাকি কি মাখানো হল আমি কোন দিনই মনে রাখার চেষ্টা
করিনি। ফালতু মুখস্থ করে রেখেই বা করবো টা কি? তার চেয়ে রেসিপী টা সেভ করে রেখে দিলেই
হল। বিরিয়ানীর মত দুর্দমনীয় রান্না আমি নিজে নিজে করতে পারবো এত দুঃসাহস আমার নাই ভাই।
যাকগে – যা বলছিলাম – হ্যাঁ - আমি আবার ঐ মশলা
মাখানোর কঠিন কাজ টা খুব ভালো করতে পারি – নিজে বলে বলছি না – কিন্তু দুই হাত দিয়ে
এমন মশলা মাখালাম - মানে সে কি বলবো – কোন টা মাংস আর কোন টা সেই লেই বোঝে কার সাধ্য।
হুঁ হুঁ বাবা – কোন ইয়ার্কী নয়। তাপ্পর বিশেষ কিছু না। সেই মাংসের লেই কে ঝুড়ি চাপা
দিয়ে একদিকে গ্যারাজ করে দিলুম।
এখন
তো আবার সুগন্ধি ভাত তৈরি করতে হবে। তার আগে সেই শাহজিরা-শাহমরিচ-জয়িত্রী-জাঁয়ফল সব
নাকি গুঁড়ো গুঁড়ো করে নিতে হবে এবং এটাও বিশুদ্ধতা বজায় রেখে মিক্সী নামে কি নাকি যাবনিক
যন্ত্র বেরিয়েছে আজকাল, তাতে ছোঁয়ানো যাবেনা। তবে কেষ্ট-বিষ্টু দের থেকে যেমন শুনেছিলুম
তেমন করে নাকি ন্যাকড়ায় ফুটিয়ে এক্সট্র্যাক্ট না বার করলেও চলবে। হবেও বা – কালে কালে
কত কিছুই শুনবো (দীর্ঘশ্বাস)। এদিকে আমার তো আবার একে মশলা বেটে তায় মশলা ঘেঁটে হাতের
কল-কবজার ঝুরিভাজা অবস্থা। এ দেখলাম খুব সহানুভূতি জানিয়ে ‘আহা তোর খুব পরিশ্রম হয়েছে,
বোস বোস, ল্যাবেঞ্চুষ খা’ এসব বলছে। আমার সরল মন তাই ন্যাচারালি তখন কোন সন্দেহ করিনি।
ভাবলাম ‘বাব্বা দেখেশুনে একটা বিয়ে করেছি বটে। বর টা আমার কি কেয়ারিং”। ও হরি! এ দেখলাম
বেমালুম শুকনো মশলার ঠোঙ্গা মা কে ধরিয়ে দিয়ে বললো – “মা তুমি শিলে গুঁড়ো করে দাও তো,
অদ্রিজা করলে কাল-পরশুর আগে হবেনা”। বলে আয়েশ করে বসে ডিসকভারি তে মগরমাছ (মানে কুমীর
- কুমীর) ধরা দেখতে লাগলো!!! এদিকে পৌনে দশ টা বাজে। এখনো ভাত হয়নি। এই কি মগরমাছ ধরা
দেখার সময়??? যাকগে - আমার কি? আমি বাবা চালু পার্টি – অবস্থার যা কন্ডিশন দেখছি –
আমি বাবা ল্যাবেঞ্চুষ খাওয়ার ছল করে এই বেলা দু-চারটে চকোলেট বার মেরে দি।
তা মা
বহুবছরের অভিজ্ঞা গৃহিণী, চক্ষের নিমেষে ফল-ফুল সব গুঁড়ো হয়ে গেল। আমি হাঁ করে বসে
দেখলাম। হায় হায় - কবে এই নিপুণতা অর্জন করতে পারবো (আবার দীর্ঘশ্বাস)। না – শুধু বসে
বসে চকোলেট খেলেই হবেনা, উঠে-পড়ে লাগতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে টপাং করে উঠে পরে রান্নাঘরে
গেলাম, চাল ধুয়ে হাঁড়ী তে – না না সেই বিশালাকৃতিক্স হাঁড়ী তে না, একটা সেজ হাঁড়ি তে
সাজিয়ে ফেললুম। ততক্ষণে ডিসকভারী তে মগরমাছ দেখানো শেষ করে ‘দরিয়া-ই-ঘোড়ে’ দেখাচ্ছে
– মানে জলহস্তী। তা সেটা ততো আহামরি কিছু নয় কারণ দরিয়া-ই-ঘোড়ে দের ভালো করে দেখাই
যাচ্ছেনা, তারা কাদা-মাখামাখি হয়ে ঘোলা জলে ডুব দিয়ে বসে আছে। অমরেশ আর কি করবে – কেরামতি
দেখানোর জন্য রান্নাঘরে চলে এল। যেন আমি চাল ও ধুতে পারিনা। জানেনা তো – ওস্তাদের মার
শেষ রাতে।
চালের
সঙ্গে গুঁড়ো মশলা গুলো সব মাখিয়ে দেওয়া হল। তাপ্পর বেশ করে হাঁড়ীর গলা অব্ধি জল দিয়ে
সেদ্ধ করতে দিলাম। কিন্তু বাবা – এখানে একটা কল আছে – ভাত পুরো সেদ্ধ হলে হবেনা – একটু
আধকাঁচা মতন থাকতে হবে।আমরা তো গ্যাসের পাশে দাঁড়িয়ে আছি আর মিনিট পাঁচেক অন্তর হাতা
দিয়ে ভাত তুলছি আর টিপে-টুপে দেখছি। যেই মনে হল ফর্মা মিলেছে অমনি আমি দৌড়ে গিয়ে একটা
ঝুড়ি নিয়ে এলুম আর অমরেশ হাঁড়ী শুদ্ধ ভাত তার উপর উপুড় করে দিল। কারণ আমরা কেউ ই আত্মবিশ্বাসের
সাথে ফ্যান গালতে পারিনা। আমার তো পারার প্রশ্নই ওঠেনা, অমরেশ ও পারেনা দেখে মনে গভীর
আনন্দ পেলুম। যেমন ফেলটুশ ছেলে অন্য ফেলটুশ কে দেখে মনে ভরসা পায়। কিন্তু কথা হল এত
সব কায়দার কপিকল জিনিশ – শাহজিরা-শাহমরিচ হ্যানাত্যানা – তারা ত সব ফ্যানের সাথে সেদ্ধ
হয়ে বেসিনের নালি দিয়ে আঁধারে বিলীন হয়ে গেল!!! তাহলে কি হবে? অমরেশ গাঁট্টা মেরে যা
বোঝালো – তার মর্ম হল এই যে এইসব মশলার শুধু স্বাদ আর সুগন্ধ টুকু ই থাকবে, মশলা টা
আর মুখে লাগবে না। মানে যা বুঝলাম সে নিজে হারিয়ে যাবে, অন্তরালে মিলিয়ে যাবে কিন্তু
তার সুবাস তার মাধুর্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। বাব্বা!! কি সুগভীর দর্শন।
ভাত
তো হয়ে গেল। সঙ্গে করে আলাদা জায়গায় আলু আর ডিম ও সেদ্ধ করে নিয়েছি। এবার আবার বসে
থাকা - মানে সেই কাদামাখা জলহস্তী দেখা কেননা মাংস এখনো পুরো ম্যারিনেট হয়নি। দেখলাম
এখন আর জলহস্তী দেখাচ্ছে না। তার বদলে খুদে খুদে হাতীর বাচ্চা মায়ের ল্যাজ ধরে লাফালাফি
করছে। এরপর রোদ্দুরে চিৎপাত হয়ে ঘুমিয়ে থাকা কেশর-খুবলানো সিংহ, তার পাশেই নির্বিকার
জেব্রার দল, নীলগাই না কি বলে – সেই যে কালো মতন গলার কাছটায় লোমলোম কি সব, ফোঁসফোঁস
করে নিশ্বাস ফেলা বদরাগী মোষ – এইসব দেখে বিমলানন্দ ভোগ করলুম। তাপ্পর যখন দেখালো জিরাফ
গুলো কচমচ করে পাতা খাচ্ছে, তখন পেটের মধ্যে কেমন জানি খালি খালি লাগতে শুরু করলো।
নাহ – এইবার গা তুলতে হয়। মাংস আর ম্যারিনেট হয়ে কাজ নাই।
অমরেশ
কোথেকে একটা বড় কড়াই নিয়ে এসে গ্যাসে চাপিয়ে দিল। বোধ হয় আগে থেকেই সন্ধান করে রেখেছিল।
এই মাংস রান্না খুবই সহজ। আলাদা কোন ইসপেশাল কেরামতী নাই। ওই মাখামাখা রোববারের মাংসের
ঝোল টা করলেই হবে। এসব সামান্য ব্যাপার আমার না দেখিয়ে দিলেও চলবে। অমরেশ ই রান্না
করলো। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তদারক করলুম।
এইবার
মোটামুটি ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছানো গেছে। চট করে এক মুঠো আটা মেখে ফেলেছি। মানছি প্রথমে
জল বেশী দিয়ে ফেলেছিলুম বলে আবার আরেক মুঠো আটা দিয়ে ব্যাপারটা মেরামত করতে হল – কিন্তু
এসব তুচ্ছ ব্যাপার ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা। তারপর তো সেই অতিকায় হাঁড়িতে এক পরত ভাত,
এক পরত মাংস, এক পরত মশলা আবার এক পরত ভাত এক পরত মাংস, এক পরত মশলা – এরকম আমসত্তের
মত সাজানো-গোছানো সব হল। সবশেষে উপরে কায়দা করে ডিম আর আলু গুলো বসিয়ে দিলুম। এবার
দেখি আমায় বলে “আধকাপ দুধ জোগাড় কর”।
“দুধ!!
দুধ কি হবে?”
“উফফ
– তোদের সব বুদ্ধি না!!! দুধ না হলে আতর, গোলাপ জল, কেওড়া জল এসব গুলবো কোথায়?”
কি জানি
বাবা – আমি ছাপোশা মানুষ। আজীবন দেখে এসেছি আতর সেই তুলোতে ভিজিয়ে লোকে কানের পিছনে
গুঁজে রাখে আর কি খোশবাই টাই না বেরোয় - আর আর গোলাপজল সেই বিয়েবাড়ীতে গেলে সুন্দরী
সুবেশা তণ্বী রা কলহাস্য করতে করতে বরযাত্রী দের গায়ে ছেটায়। আর কেওড়া মানে তো কেতকী
ফুল মানে কেয়া ফুল – ইশ কেয়া ফুল কোনদিন চোখেই দেখলাম না, তার আগেই জল হয়ে গেল। যাকগে
যা পাওয়া যায়। আমি কেওড়া জলের শিশিটা নিয়েই দেদার গন্ধ শুঁকলাম। কল্পনায় ভেবে নেব খন
যে কেয়া ফুল খোঁপায় গুঁজে বসে আছি। খোঁপা সত্যি সত্যি আমার নেই তো কি হয়েছে? ওটা কোন
বিষয় না। এরপর আবার কায়দা মেরে মিঠা আতরের গন্ধ শুঁকতে গেছি। পুচকে মতন তিন কোণা শিশি,
তার গায়ে আবার কি সব মিনার-ঝাড়বাতির ছবি আঁকা। আর কি বলবো কি তার সৌরভ – মাথা টা একেবারে টলমল করে উঠলো। এক চামচ এক চামচ করে সেইসব দুর্ধর্ষ জল দুধে গোলা
হল। মিঠা আতর দেওয়া হল কিন্তু মোটে এক ফোটা। কারণ বোঝাই যাচ্ছে ঐরকম মারকাটারি জিনিশ
– বাব্বা এক ছোবলেই ছবি। হঠাৎ দেখি কোথাও কিছু নেই, অমরেশ চামচের ডান্ডি দিয়ে হান্ডী
ভর্তি ভাত টার মধ্যে পাঁচ-ছয় টা সুড়ঙ্গ মতন বানিয়ে ফেলেছে। তারপর সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে
কায়দা করে দুধে গোলা জল কিম্বা জলে গোলা দুধ – যাইহোক – সেটাকে চালান করে দিল। এইবার
তো আসল খেলা। অনেক খুঁজেপেতে একটা মাপসই থালা জোগাড় করে হাঁড়ী ঢাকা দিয়ে দিলুম। তাপ্পর
সেই যে সেই আটার লেই টা ছিলো - ওটা দিয়ে একটা অজগর সাপ বানিয়ে ফেললুম। এবার সেই অজগর
সাপ টাকে দিয়ে বেশ করে হাঁড়ীর সাথে হাঁড়ীর ঢাকনা সীল করে দেওয়া হল। তাপ্পর তার উপরে
একখান তিন মণ ওজনের নোড়া বসিয়ে দিলুম। এবার লাও ঠ্যালা – যতই চেষ্টা কর এক দমকা বাতাস
ও হাঁড়ী থেকে বেরোতে পারবেনা। একেই বলে নাকি ‘দম’ করা।
এরপর
আবার এক ঘন্টা বসে থাকো। রাত ১২ টা বাজে। বসতে গেলেই ঘুমিয়ে পড়ার একটা মারাত্মক চান্স
আছে। তাই রান্নাঘরেই ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে থাকলাম। রাজকীয় খাদ্যের সম্মানে বাহারী থালা-বাটী–চামচ
সব টঙ থেকে বার করে ধুয়ে-মুছে টেবিলে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। আমিও একটু চুল-টুল আঁচড়ে পাউডার
মেখে বাহার দিয়ে নিলুম বাবা। যতই হোক - যে বাড়ীতে বিরিয়ানী রান্না হয়, সে বাড়ির লোক
রা তো আর আলু-থালু হয়ে থাকতে পারেনা। এসেন্স মাখার দরকার নেই। মিঠা আতরের সুবাস এখনো
মিঠাই এর রসের মত নাছোড়বান্দা। ওদিকে হাঁড়ীর মধ্যে কি হচ্ছে জানিনা, হাঁড়ীর বাইরে আটার
অজগর সাপ টা দম হয়ে শুকিয়ে গেছে। দেখে কেমন মায়া লাগলো – আহা রে – ফেলে দেব? তার চেয়ে
বরং কাক দের দিয়ে দেব। ওরাও দম-আটা খাক। হ্যাঁ হ্যাঁ সঙ্গে বিরিয়ানী ও দেওয়া হবে। মোটেই
আমি খারাপ না কিন্তু। অমরেশ সেই যে গ্যাসের সামনে টুল নিয়ে বসেছে, নড়ার আর নাম ই নেইনা।
খালি মাঝেমধ্যে ঘড়িটা দেখছে। এক ঘন্টা আর কাটেনা। বাব্বা – মিনিটের পর মিনিট যায়, দাঁড়িয়ে
আছি তো দাঁড়িয়েই আছি – তারপরেও ‘তোমার দেখা নাই রে তোমার দেখা নাই’। ল্যাম্পপোস্টে
ঠেকনা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, খোঁচা খোঁচা চুল আর কদম ফুলের মত দাড়ি, ফুল হাতার উপর হাফ
হাতা জামা পরা, কানে হেডফোনের ছিপি গোঁজা, বিচলিত-হৃদয় সদ্য-যুবকের রোমাঞ্চকর প্রতিক্ষাও
এর কাছে হার মেনে যাবে।
অবশেষে
অবশেষে হুইসিল বাজলো। খেল খতম, এবার পয়সা হজম কিনা সেটাই দেখার। অজগরের নাগপাশ থেকে
ঢাকনা ছাড়িয়ে হাঁড়ী খোলা হল। অমরেশ বললো অপূর্ব সুবাসে নাকি ঘর ম ম করছে। আমার আর কি?
অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত্রি। একবার যে মিঠা আতর শুঁকেছে, বাকী সব ই তার কাছে ফিকে।
তবে হ্যাঁ – দেখতে খোলতাই হয়েছে। কিন্তু তখন কিছুই আর উৎসাহ নিয়ে দেখার মত মন নেই।
খিদের চোটে পৃথিবী অন্ধকার। কোন কথা না বাড়িয়ে চটপট থালায় ঢেলে ফেললুম। অমরেশের আবার
সখ কত!!! ঐ সঙ্গীন অবস্থা, মরি কি বাঁচি তার ঠিক নেই – তার মধ্যেই আলু ডিম ভাত মাংস
সব দোকানের স্টাইলে সাজাতে লেগেছে। কোন মানে হয়!!!
শেষ
অব্ধি গুছিয়ে বসলাম। যতই খিদে পাক, রাজারাজড়ার খাবারের উপর তো আর দুর্ভিক্ষপীড়িতের
মত ঝাঁপিয়ে পরা যায়না। সহবত বলেও একটা কথা আছে। খেতে হলে বাদশার ঠাঁট বজায় রেখেই খেতে
হবে। এক চামচ ভাত মুখে তুলেই মন আনন্দোল্লাসে ভরে গেল – আরো আগ্রহ নিয়ে একটু আলু খেলাম – আহা - এই না হলে হয় - একটু মাংস খেলাম – চমৎকার চমৎকার। মহাউৎসাহে এইবার
গোষ্ঠ মামার মত খাপ পেতে সবে তীর টা ছুড়তে যাব, দেখি অমরেশ হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে
আছে। দেখে ভারী মায়া হল। আহা রে। নরম গলায় বললাম – “না মানে ভালোই হয়েছে আর কি – কিন্তু
মানে ভাতটায় আরেকটু নুন হলেও হত বোধ হয় আর আলু টা মানে – একটু শক্ত মনে হচ্ছে - মানে
আমি আনাড়ী পাবলিক – অতশত তো বুঝিনা – তুই একবার খেয়ে দেখ - আর মাংস টা – মানে ঐ ঠিকই
আছে – তবে হ্যাঁ বলতেই হবে ডিম টা দারুন সেদ্ধ হয়েছে – মোটকথা সব মিলিয়ে মন্দ হয়নি”
– মানে ক্ষুধার মুখে তিন্তিড়ীও মিস্টি লাগে – যাকগে সেটা আর বললাম না। অতটাও নিষ্ঠুর
নই রে বাবা।
অমরেশ আহ্লাদের চোটে বড় এক চামচ ভাত মুখে দিয়েই নুন আনতে ছুটলো, তাপ্পর
আলু টাকে তরিবত করার অনেক চেষ্টা করেও যখন কৃতকার্য হলনা – দুচ্ছাই বলে বেমালুম বাদ
দিয়ে দিল। মাংস টা সুস্বাদু হলেও এত বড় যে ঠিক ম্যানাজ করা গেলনা। মানে আমি গোবেচারা
বলে পারলাম না আর কি। ডিমসেদ্ধ সহযোগে সুবাসিত ভাত খেয়ে যখন প্রাণরক্ষা হল তখন টা ১টা
২০ বাজে। বাকীটা তুলে রাখা হল। যা বোঝা গেল এই কঠিন পরিশ্রমের পর নিদারূণ ঠান্ডায় ক্ষুধার্ত
কলেবরে বিরিয়ানী কেন কোন খাবারই ‘কেমন খেতে হয়েছে’ বিবেচনা করার মত মানসিক জোর আমাদের
নেই। পরেরদিন দুপুরে আবার খেয়ে এই অপূর্ব খাদ্যের গুণাগুণ নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করা
হবে এই মর্মে চুক্তি করে কম্বল মুড়ী দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লুম।